ডেঙ্গুর ডায়েরি
১৩ই অগাষ্ট, রা্ত, ওষুধের দোকান……
আমি কিনা যতই বলি ওরে শরীর টা মোটেই ভাল ঠেকছে না ! অখিল ততই বলে “তোমার শরিল কি আমার থেকে বেশী খারাপ? তুমি কিছু জান? কোন খবর রাখ? আমার গা হাত পা ঝিম ঝিম করে,মাথা ভনভন করে, আর্ধেক দিন কাজের লোক আসেনা সেই সক্কাল থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রক্ত টেনে গু মুত কালেকশান করে ৮টায় দোকান খুলি তারপরে”………পরের কথা গুলো আমিই আগে বলতে থাকি ‘ভাগনে ১২ টার আগে টিফিন আনতে পারেনা………বাজার এর অবস্থা খুব খারাপ ওই অমুক বাবু ওষুধ নিয়েছে্ন, বাকি তে, পয়সা দিচ্ছে না কিন্তু বাকির খাতা বেড়েই চলেছে, পাওনাদার রা কি এসব বুঝবে?......অখির আকর্ণ শাকালু দেখিয়ে দেয়। অখিলের এই রেকর্ড টাকে আর এখন ভাঙ্গা বলা যায় না ওটা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে পাউডারে পরিনত হয়েছে অনেক দিন হল কিন্তু আমার এখন ওর ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই……
বছর কুড়ি আগে যখন আমাদের বাড়ি তে ফাইফরমাসের কাজে লাগে তখন ওর বয়েস
বছর ছয়েক। সাধারণ গ্রামের ছেলে যার চোখ দুটো তে অপার বিস্ময় আর মুখে সব সময় শাকালুর
দোকান খোলা। সেই অখিল আমার কালিন্দীর ওষুধের দোকানে সকালের টিফিন নিয়ে যেত, দোকান ঝাড়
দিত ঠাকুরের মিষ্টি এনে দিত, তার পরে প্রায় রোজই গুলি খেলতে যে কোথায় চলে যেত বুঝতেই
পারতাম না, ১টা দেড়টার পরে তাকে খুঁজতে বেরোতে হত কোনো দিন পি ব্লক এর মাঠে কোনো দিন মসজিদের পুকুর
ধারে কোনদিন প্রগতিপল্লীর গলিতে বস্তির ছেলেদের সাথে তাকে প্রচুর গুলি সমেত উদ্ধার
করতে হত। বেশীর ভাগ দিনই কোনো না কোনো ঝামেলায় লিপ্ত অবস্থায়। মারতে মারতে ব্যাটা কে
নিয়ে যখন বাড়ি ফিরতাম তখন ও সে হাসতো, “হে হে দাদা আমার সাথে কেউ পারেনা ১ টা গুলি
ধার নিয়ে, খেলে খেলে সব গুলি নিয়ে নিয়েছি তাই ওরা আমার সাথে ঝামেলা করে হে হে হে”
অখিল কে ইস্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সে বেঁকে বসে পড়বেনা
কারন লেখা পড়াটা নাকি মোটেই কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয় এসব করে তার মাথা খারাপ হচ্ছে
তাকে বরং সাইকেল চালান শিখিয়ে দেওয়া হোক তাতে নাকি আমাদের পরিবারের বিশেষ লাভ, সে বাজার
করে আনতে পারবে, আমায় টিফিন পৌঁছে দিয়েই বাড়ি ফিরে অন্য কাজ করতে পারবে, রেশন তুলতে
যেতে পারবে……… আর গুলি খেলতে? এর উত্তরে আবার শাকালু, মাঝে মাঝে খেলা ধুলা করা উচিৎ,
আমি নাকি জীবনেও খেলা ধুলা করিনি তাই খেলার গুরুত্ত বুঝতে পারবোনা……কিন্তু সাইকেল এর
উপকারিতা সম্পর্কিত এই সাধারন বিষয় টা বুঝতে না পারার জন্য সে আমার এবং আমার বাবার
বুদ্ধি নিয়ে প্রচুর চিন্তিত থাকত। এক দিন রাতে প্রায় ২ ঘন্টা অনেক কিছু বোঝানোর পরে
যখন প্রায় নিশ্চিত যে ব্যাটা এবার থেকে নিশ্চয় পড়াশুনা করবে অখিল পরের দিন বাড়ি পালাল
একটি চিঠি লিখে “বৈ দি আম তলে দাচি” আমার মা কে সে বৌদি ডাকত, লেখাটার মানে মা ই উদ্ধার
করেছিলেন, মনে হয় সে লিখতে চেয়েছিল “বৌদি আমি চলে যাচ্ছি”। সেই অখিল অবশেষে ফিরে এসে
আমার সাথে চিট পোকার মত চিপকে থেকে দোকানের কাজে লেগে গেল। আমার কাছে সব সময় গাট্টা
কিল চড় লাথি খেয়েও সে অনুগত থাকতো, নতুন ওষুধ এলে সাজিয়ে রাখতো, দোকান পরিস্কার রাখতো,
ফ্রিজ পরিস্কার করতো, পাওনাদার দেখলেই আগে ভাগে তাকে বিদায় করার চেষ্টা করে ও বকুনি
খেয়ে আমার বুদ্ধির নিন্দে মন্দ করতো। হঠাৎ ই তার নতুন বাই উঠল......ইঞ্জেকশান, যেটা
নাকি না দিতে পারলে মানুষের বেঁচে থাকার কোনো মানে হয়না সুতরাং একটা ইঞ্জেকশান তাকে
একবার দিতে দেওয়া হোক এই নিয়ে অনেক অনুরোধেও যখন আমাকে টলানো যাচ্ছে না তখন একদিন আমার
দোকানে এক অত্যন্ত সাস্থবান ভোলাভালা বিহারী ট্রাক ড্রাইভার এলেন তার পা কেটে গ্যাছে
ডাক্তার টেট ভ্যাক নিতে বলেছেন। অখিল তখন ফেলে দেওয়া সিরিঞ্জে জল ভরে আলু তে সুচ ফোটানো
প্র্যাক্টিস করতো, লোক টিকে দেখেই সে এমন একটা মুখ করলো যেন মারাদোনার সামনে মিলন সমিতির
ডিফেন্স। পেশেন্ট রুমের ভেতর থেকে লোকটি একবার বললেন “মার দিয়া রে” ৮ বছরের অখিল তাকে
এক ধমক দিয়ে বললো “ কেয়া হুয়া পা কাটার সময় তো আরো বেশী লাগা হ্যায় চুপ একদম, নেহি
ত আর একটা সুই দেগা” মোক্ষম ! লোকটি আর কথা বললে না। অখিল পেশেন্ট চেম্বার থেকে বেরিয়ে
বিজয়ীর হাসি হেসে বলে “পাশ”।
আমার বিয়েতে যখন বাস দেরী করে আসায় সমস্ত বর যাত্রীরা গাড়ি করে করে
বিবাহ বাসরে পৌঁছায়, অখিল তখন বিশ্বস্ত থেকে বাসের প্রতীক্ষা করে ও শেষ মেশ একা একটা
বিশাল বাস নিয়ে বিবাহ বাসরে উপস্থিত হয়।এবং আমার যে পয়সা বেশী হয়নি আর এটা সব্বার বোঝা
উচিৎ সেটা সক্কল কে ভাল করে বুঝিয়ে বিয়ে বাড়িতে নতুন বিতর্কের সুচনা করে। বাসি বিয়েতে
কাক স্নান অনুষ্ঠানে একটা জলজ্যান্ত কাক ধরার জন্য অখিল যখন টোপ হিসাবে ইঁদুর না মাছ
কি ব্যবহার করবে এই নিয়ে চিন্তিত তখন প্রবল হাস্যরোলের মদ্ধ্যে তাকে বোঝান হল কাকস্নান
মানে কাক কে স্নান করানো নয়, অখিল অবাক হয়ে আমায় বললে “দাদা এরা সবাই হাসছে আর আমায়
ভুলভাল বোঝাচ্ছে কাক কে স্নান না করালে কাক স্নান হবে কি করে? আমায় কিন্তু কেউ চেনেনা
তুমি বল আমি একটা কাক ধরতে পারবনা ? তোমাদের আত্মিয় স্বজন দের কারো বুদ্ধি নেই”, ভাগ্যিস
বেশির ভাগ আত্মিয় বন্ধুরাই অখিল কে চিনতেন।
মাসল থেকে ইন্টারভেনাস ইঞ্জেকশান, রক্ত টানা থেকে ক্যাথিটার পড়ানো শুধু
মাত্র গাট্টা কিল চড় আর গালাগালির দক্ষিনায় সবগুলো অখিল এমন ভাবে শিখল যে আমার নিজের
জন্য ও ছাড়া আর কাউকে ভরসা করতে পারিনা সিমস মিমস সব কন্ঠস্থ যেমন এক সময় থাকত আমার……সেই
অখিল এখন এ পাড়ার সব থেকে মড়া ওষুধের দোকানটা ভাড়া নিয়ে সেটাকে সব থেকে চালু ওষুধের
দোকানে পরিনত করেছে। কালিন্দীর ওষুধের দোকান টাও পার্টনারশিপে কিনেছে (যদিও বাবাকে
সেখানে মাঝে মাঝেই যেতে হয় অখিলের চাপাচাপিতে) বুদ্ধিটা তার পড়াশুনা ছাড়াই ফুটন্ত।
১ টা মার্বেল কে ৫০ টা করতে সে শিখেই এসেছিল এখন শুধু মার্বেলটা বদলে গিয়ে পয়সা হয়েছে
মাত্র। আমাকে সে সব সময়ই গুরু জ্ঞান করে। তার দোকানে আপনি যাবেন আর ওষুধ না নিয়ে ফিরতে
পারবেন এমন টা খুব বিরল। এটা না থাকলে সেম জেনেরিকের ওটা, বেচে সে আপনাকে দেবেই এর
থেকে নিস্তার এমন কি আমার ও নেই।তাই এটা বুঝি গুরু মারা বিদ্যেটা সে ভালই রপ্ত করেছে।
কিন্তু এখন এই যে আমার শরিল(শরীর) খারাপ তার তো মাথা আর কাজ করছে না……
“তোমার বুদ্ধি এত কম না মানে কোনো মানে নেই” অবতারের নাম বিরক্ত অখিল।
“তুমি ডাক্তার কে কেন বললে তোমার আমাশা হয়েছে?” আমি অবাক হয়ে বললামঃ তা হয়েছেই তো,
"তুমি কি আমার থেকে বেশী বোঝো?" দোকান ভর্তি লোক আমার দিকে এমন ভাবে তাকালেন
যেন আমি পকেটমার…"কি বুদ্ধিতে তুমি ওরনিডাজোল খেলে?" আমি বলি, ডাক্তার……
অখিল বলে "ডাক্তার আমার থেকে বেশী জানেনা" একজন কাস্টমার আমায় অভয় দিয়ে বলেন
“দাদা, ভাই পুরো ধনন্তরী একবার ভরসা রেখে দেখুন", আমি আর কি বলব আখিল বলে
"আরে দুর এ লোক সব সময় বেশী বোঝে আর ভোগে,আমাশা মানে কি পেট খারাপ লুজ মোশোন?
ডাক্তার এর সাথে অত কথার কি আছে জ্বর হয়েছে
ব্যাস", এক মহিলা বলেন 'ছেড়ে দাও ভাই উনি বুঝতে পারেন নি' আমিও ওনার দিকে সম্মতিসুচক
দৃষ্টি দিয়ে বলি পায়খানা টা বন্ধ, পেট ফুলে গ্যাছে রে আর গ্যাস মানে………আমি কিছুই করিনি
তাও সেই মহিলা নাকে কাপড় দিলেন, অখিল ব্রম্মচারি ছবির প্রানের মত চোখ পাকিয়ে বলে "গ্যাস ত হবেই" অবতারের নাম
অন্তর্যামি অখিল…… "আমাশার থেকে লিভার টা খারাপ হয়ে গ্যাছে তুমি শরিল টার কোন
যত্নই করবে না", এক দাদু গোছের লোক বললেন 'আরে গ্যাস হচ্ছে কারন পায়খানা ক্লিয়ার
হচ্ছেনা আপনি ভাই কায়ম চুর্ন খেয়ে দেখুন আমার তো খুব কাজে দেয়' পাশের ভদ্রলোক মনে হয়
ওনার ছেলে হবেন তিনি এক ধমক দিয়ে বললেন 'আঃ চুপ করো তো যাকে তাকে জ্ঞান দেওয়া বাজে
অভ্যাস, এই ভাই অখিল একজন কাস্টমার নিয়ে এত
টাইম দিলে চলবে? আমায় ছাড়ো এবার', অখিল এর মুখ কিন্তু চালুই ছিল সে আমায় ধমকেই যাচ্ছিল "তোমায় ওরনিডাজল দিল আর তুমিও খেয়ে ফেললে ?
তোমার কি ক্রিমি হয়েছে? তুমি এলবেন্ডাজল টা
খেলে কেন? আমার উপর তোমার কোন ভরসা নেই? আমি আছি কেন?" ব্লা ব্লা ব্লা এই ভদ্রলোকের
কথায় তার ছেদ পড়ল, সে পাকা সেলসম্যানের মতো লোকটির দিকে তাকিয়ে বললে “আপনার কি মনে
হয় আমি দাদার সাথে কথা বলছি?" লোক টি ঘাবড়ে গেল “ হা আমি দাদার সাথেই কথা বলছি
কিন্তু আমার মাথা টা কম্পুটার, মাথার ভেতরে কিন্তু আপনাকে কি দেব সেটাই ভাবছি” বলেই
দুম করে একটা ট্যাবলেট এর স্ট্রিপ থেকে ১০ টা ট্যাবলেট কেটে ওনাকে বললো এটা আগে রাখলাম
কাশিটা চলে যাবে এবার অন্য সাইড টা গার্ড করে দিচ্ছি।আমি মিউ মিউ করে বললাম ওফ্লক্সাসিন
বা সেফালোস্পরিন কিছু একটা দে আমার জ্বর টা………তোমার জ্বর এর দায়িত্ব তুমি নিওনা ওটা
আমার উপর ছাড়, অখিল তখন পালনহার…… ভদ্রলোক ওদিকে চটেছেন তার মিসেস এর নাকি কাশি হয়
নি কিন্তু অখিল প্রথমেই কাশির ট্যাবলেট দিয়েছে কি গেরো। অখিল তবু মচকায় না আমায় একটা
হাল্কা চোখ টিপে বলে “ আরে কাশি নেই জানি কিন্তু আজ রাত থেকেই হবে ১৮ বছরে জ্বর আর
কাশি নিয়েই কাটিয়ে দিলাম আপনি আমায় শেখাচ্ছেন? আপনার বউ এর জন্য তো তবু আপনি আছেন কিন্তু
আমার দাদার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ নেই কত জ্বর এখন তোমার তুমি তো কাঁপছ”,ভদ্রলোক ওমনি
আমায় বললেন 'সেকি আপনি আসুন বসুন তো।'
অবশেষে আধঘন্টা ধরে আমার নির্বুদ্ধিতার নানান ফিরিস্তি দিয়ে অখিল বললে
ওই সব ওফ্লক্সাসিন খেয়ে কিছু হবে না তোমায় যা দিচ্ছি এটা নিয়ে যাও ইতিমধ্যেই দোকানে
আরো লোক চলে এসেছেন তাদের নানান চাহিদা এক ভদ্রলোক এক কোনায় বসে খবরের কাগজ পরছিলেন
তিনি বললেন "বেঁচে গেলেন দাদা ওষুধ টা দেখবেন ম্যাজিকের মত কাজ করবে।" আমি
একটু ঘাবড়ে গেলাম হতচ্ছাড়া অখিল পয়সা দিয়ে মার্কেটিং এর লোক পুষছে নাকি? আমি বলি ভাইরে
তুই রক্তটা পরিক্ষা করা আমার মনে হচ্ছে ডেঙ্গু ডেঙ্গু ভাব, অখিল বলে "আরে ধ্যার
এই লোকটা খালি এক্সট্রিম কল্পনা করে, কিচ্ছু হয় নি তোমার এই নাও জেনসিন ২০০ দিয়ে দিলাম
সাথে প্যারাসিটামল ৬৫০, ১০০ পেরোলেই একটা,
সাথে ভাইজিল্যাক দিলাম"। আমি আজকাল আর মেডিসিনের ট্রেড নেম মনে রাখতে পারিনা তাও
দুরুদুরু বক্ষে বললাম জেনসিন টা ওফ্লক্সাসিন নয় তো? "কোনটা" বলে অখিল এমন
একটা চোখে তাকাল যেন পাঁচ বছরের বালক রজঃশ্রাব সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। আমি ঘাবড়ে গিয়ে
বললাম ঠিক আছে ঠিক আছে, অখিল বললো "হা ওফ্লক্সাসিন টাই কাজ করবে মনে হচ্ছে,"
কিন্তু তুমি এই সব ফালতু ডাক্তার দেখানো বন্ধ করো এদের কে লাইসেন্স দিচ্ছে? আমি বললাম
জানিনা ভাই তবে তোর পলিক্লিনি্কেই বসছেন।অখিল বলে "আঃ আমি কি জানিনা কোথায় কে
বসে কিন্তু আমার কথা হল ডাক্তার অনেক কিছু বলবে সব শুনতে নেই।" ওষুধ টা হাতে নিয়ে
থ্যাঙ্ক ইউ ভাই বলেই বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম, অখিল তখনো ফোনে চিৎকার করে কাউকে ডিকটেট করে চলেছে
"আমার দেখার দরকার নেই শুনেই বুঝে গেছি, ওটা গরম গোটা নয় কারবাংকল হয়েছে আমি ওষুধ
পাঠিয়ে দিচ্ছি আর কোনো কথা হবে না সেরে গেলে কি খাওবেন সেটা ঠিক করুন"।………
১৪ ই অগাষ্ট সন্ধ্যে আমার বসার ঘর
সোফায় বাঁ কাত হয়ে শুয়ে আছি, তিন চার দিন ধরে পায়খানার দেখা নেই, ২৫ বছর ধরে একটা অদ্ভুত রোগ আমার আছে সেইটাই আবার রিল্যাপ্স করবে কিনা তার ভয়ে সিঁটিয়ে আছি। আপাতত গুহ্যদেশে দুটি ডাল্কুলাক্স সাপোসিটার সহস্তে পুশ করে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি। পেটের ভেতর কোনো হেলদোল নেই যেন কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব, আমাকে কি অগস্ত্য মুনি বলা যায়? মাঝে মাঝেই হাতের পালস দেখছি সে কি এল?
সোফায় বাঁ কাত হয়ে শুয়ে আছি, তিন চার দিন ধরে পায়খানার দেখা নেই, ২৫ বছর ধরে একটা অদ্ভুত রোগ আমার আছে সেইটাই আবার রিল্যাপ্স করবে কিনা তার ভয়ে সিঁটিয়ে আছি। আপাতত গুহ্যদেশে দুটি ডাল্কুলাক্স সাপোসিটার সহস্তে পুশ করে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি। পেটের ভেতর কোনো হেলদোল নেই যেন কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব, আমাকে কি অগস্ত্য মুনি বলা যায়? মাঝে মাঝেই হাতের পালস দেখছি সে কি এল?
বড় পিশামশাই দেখা করতে এসেছেন উনি এমনিতেই পায়খানা বিশারদ হিসাবে কুখ্যাত।
তিনি তার জীবনের নানান কাহিনী বলে চলেছেন সাথে লেবু,বেল,পাকা পেয়ারা,কলা,হরতুকির উপকারিতা
নিয়ে নানান বৈদিক ব্যাখা ও চলেছে। বছর ২৫ আগে সুরেশ দার চায়ের দোকানে সন্ধ্যে বেলায়
আড্ডা মারতে মারতে হঠাৎ অনুভব করেছিলাম আমার হার্ট খুব জোরে চলছে, গুনে দেখি প্রায়
১৫০। যে পরিমান ঘাম হতে শুরু করলো বুঝে গেলাম নির্ঘাত মারা যাচ্ছি, কে একজন বললো এক্ষুনি
ডাক্তার দেখাও, আমি হেলথ কেয়ার এর দিকে দৌড় দিলাম।ডাক্তার (নাম টা স্পষ্ট মনে আছি কিন্তু
বলছিনা)এর ঘরে ঢুকে ভাবলাম উহুঃ হার্ট এর দোষ হলে দৌড়লাম কি করে? “প্রেমে পড়েছেন?”
ডাক্তার এর এমন একটা বেমক্কা প্রশ্নে চোখের সামনে ত্বন্নীদের ভিড়! কে রে? কে? কার প্রেমে পড়লাম সত্যি নাকি? এনাম ৫, আসা
৫০ আর এল্প্রাজোলাম ০.২৫ এর স্ট্রিপ কিনে বাড়ি ফিরে মন টা ভাল হয়ে গেল ধড়ফড়ানি টা অনেক
আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। নাঃ গুরু প্রেমে আমি পড়িনি বা এখনো ঠিক করে উঠতে পারিনি কার সাথে
প্রেম করা যায়, কিন্তু জীবন কি শুধুই প্রেম রে পাগল জীবনের আরো গভীর মানে আছে কত্তা,
কিন্তু কি ই বা লাভ আমার তো হার্ট টাই খারাপ হয়ে গেল। নাঃ যে কদিন আছি ভাল হয়ে থাকতে
হবে।নিজেকে কেমন যেন দেবদুত মনে হল, মা রাতে একটা ভুলভাল তরকারি করেছিলেন সেটা অমৃত
মনে হল, আমার আঁকার রঙ আর তুলির সেট এর প্রতি বোনের সর্বদাই কূনজর আজ নিজেই ওকে সব
দিয়ে ভারমুক্ত হলাম। ঘুম আসছিল না যদিও জানতাম ঘুমিয়ে আমায় পরতেই হবে কারন আল্প্রাজলাম
রঙ দেখাবে কিন্তু আমি কি আর উঠব?
বাবা বললেন “তো বুঝলেন জামাই বাবু পায়খানা না হলেই ওর হার্টবিট বেড়ে
যায় আর প্রবল ঘাম দেয়।অল্প বয়েসে তো ভেবেই ফেলেছিল ও আর বাঁচবেনা। আমি দেখি ছেলে আমার
হার্ট এর ওষুধ খায়, দিলাম ধমক আহাম্মক! তুই
কিনা পাহাড়ে চড়ে,বল খেলে,গান করে বেড়াস তোর হার্ট এর দোষ? সে দেখি ছেলে আমার চুপ চাপ শান্ত হয়ে গ্যাছে শেষ মেশ ভাল ডাক্তার দেখাতেই
তিনি বললেন পায়খানার সমস্যা ওটা আটকে গেলেই ধাঁইধাঁই করবে।" পিশামশাই স্ত্রীকে
বললেন “বৌ মা তুমি ওকে হরতুকির গুঁড়ো করে খাওয়াবে” বড় পিশামশাই আমার ব্যাপারে সর্বদাই
চিন্তিত আমার নামটা তাঁর দেওয়া এবং সেটার জন্য তিনি সর্বদাই প্রিভিলেজ প্রত্যাশা করেন
এমনি গুনি আর খুব শিক্ষিত মানুষ। কলেজের প্রফেসর ছিলেন নিজের একমাত্র পুত্র সন্তান
আর আমার মধ্যে খুব একটা তফাত করেন না। ফল টা এই যে আমরা দুইভাই ই তার ভয়ে ত্রস্ত থাকতেই
অভ্যস্ত।ভদ্রলোকের একটা স্পিরিচুয়াল দিক আছে সেটাই কারন কিনা জানিনা, মাছ মাংস অতি
ভক্ষনে পায়খানা কষিয়া যাবার ব্যাপারে একটা বড়সর লেকচার খেয়ে গেলাম ওদিকে পেট টা নট
নরন চরন টকাস মার্বেল।ডাল্কুলাক্স মালটা এক্সপায়ার হয়ে যায় নি তো, ওয়েস্ট বক্স থেকে
রাংতা কাগজটা খুঁজে দেখলাম না জ্যান্ত ছিল তারপরেই নিজেকে নিজেই ভর্ৎসনা করলাম ধ্যার
গ্লিসারিন এর আবার এক্সপায়ারি ঠান্ডায় রাখলে………… পেট টা কি একটু মোচড় মারল?
১৫ ই অগাষ্ট রাত ২ টো আমার শোবার ঘর
স্নানের বালতি হাতে ধরে বাবু হয়ে বসে আছি, নিজেকে মনে হচ্ছে বন্যার্ত,
সরকারি রেশনের অপেক্ষায়। গত সন্ধ্যে থেকেই
হাত পা নাড়ানোর শক্তি নেই, আজ সকালে যখন ঘুমটা ভাঙলো মনে হল স্লিপ প্যারালাইসিস, কারন আমি জেগে আছি ঠিক কিন্তু শরীর নাড়াতে পারছিনা, কোথার
থেকে যেন একটা কুঁই কুঁই শব্দ হচ্ছে। বাড়িতে কুকুরের বাচ্চা ঢুকে পড়ল নাকি? তার পরেই
মনে হল পাড়ায় তো কোনো কুকুর বাচ্চা দিয়েছে দেখিনি। নির্ঘাৎ বেড়াল, আমাদের পিছনের বাড়িতে
বেড়াল এর চাষ হয়। এই ভাবতে ভাবতে কান টা খাড়া করে দেখি শব্দ টা খুব কাছে………শেষে আবিস্কার
করলাম ওটা আমারই গলা থেকে বেরোচ্ছে। ইশশশশ কি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি এইটুকু জ্বরেই……… ভাবতে
ভাবতেই আবার ঘুমিয়ে পড়লাম বা অজ্ঞান হলাম…… রাত ১১টা ৩০ নাগাধ অখিল এসে খুব তম্বি শুরু
করল। আমি কেন কিছু খাচ্ছি না স্ত্রী হিসাব করে বললেন ১৪ ঘন্টা ধরে কিছু নাকি খাইনি।
আমি শুধু বলতে গেছিলাম পায়খানা টা না হলে, অখিল এমন রে রে করে উঠল যেন পায়খানা ব্যাপারটার
উপরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে এমন কি এই নিয়ে কোনো কথা বলাও দন্ডনীয় অপরাধ।আমাদের বাড়ির
কাজের দিদি রেখা বললেন “খাচ্ছে কিছু যে বেরোবে?”। অখিল মাথা নেড়ে এমন একটা মুখ করলো
যেন এটা কে রে বুরবক যেটা রেখাও বোঝে এ মাল সেটা বোঝেনা। আমি প্রায় লজ্জায় চোখ বুজে
ফেললাম। স্ত্রী বললেন “ধ্যার যত ফালতু কথা বমি হচ্ছে কেন সেটা আগে বল, এটা তো লেটেস্ট
ডেভলপমেন্ট?” অখিল একটু চমকে গেল অখিল কি আমার স্ত্রী কে ভয় পায়? মনে মনে এটা ভেবে
একটু মজাই পেলাম যাক বাবা আমি তো মনে করতাম আমি একাই ভয় পাই। বাঁ হাতের তালুর উপর ডান
হাতের তর্জনী দিয়ে ঠুকতে ঠুকতে স্ত্রী বললেন “ বমি টা কেন হচ্ছে সেটা আগে বল”। ভাবটা
এই যে তুমি কেনার সময় বলেছিলে সব ঠিক আছে এখন মালে লিকেজ কেন হচ্ছে? অখিল বললো “সেটা
তো একটা কথা” আমি মজা পেয়ে চোখ খুলে দেখি ব্যাটা ঘাবড়ে গিয়ে আমতা আমতা করছে।কিন্তু
মুহুর্তে সামলে নিয়ে বলে আরে মাল কিছু না বেরলে বমি তো হবেই। স্ত্রী এবার প্রায় বোমার
মত ফেটে পরলেন “মানে? তুই বলছিস স্টেট চেঞ্জ করে লিকুইড হয়ে মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে? কি
ফালতু কথা বলে……” আমি হেব্বি মজা পেলাম নে শালা ভুজুং ভাজাং দে আরো দেখ কেমন লাগে।তারপরে
হঠাৎ অখিল হাত তুলে বললে “দাঁড়াও………ফালতু কথা বলার ছেলে অখিল দাস নয়” আমার দিকে তাকিয়ে
বলে “তোমার ভাগ্য ভাল হলে আমার ব্যাগে মালটা আছে” বলে সাঁইপ সুঁপ করে হেব্বি কায়দায়
ব্যাগটা খুলে ফেলল যা দেখে আমার জাঁদরেল স্ত্রী অব্ধি চুপ। জোফার ইঞ্জেকশানের ডগাটা
খুব কায়দা করে ভেঙ্গে ফেললো আমার স্ত্রী বললেন “আই সাবাস” অখিল তাতে একটু লজ্জা পেয়ে
আমাকে দেখিয়ে বলল দাদার থেকেই শেখা আমার সাথে সাথে মনে হল হ্যাঁ আর এখন দাদার ই পেছনে………পেছন
ভাবতেই আবার মনে পড়ে গেল অনেক দিন পেছনে জল পড়েনি, অখিল ততক্ষনে ভেইন প্রিক করে ফেলেছে।
মনে হচ্ছে আমার প্রেসার কম বমিটাও হচ্ছে, আমি তাই শুধু বলতে গেছিলাম
ডেঙ্গুর একটা টেস্ট কি করা উচিৎ? কিন্তু ডে বলার সাথে সাথেই বাবা আর অখিল সাঁড়াশি আক্রমন
করে দিলেন আমিও চেপে গেলাম। স্ত্রী বললেন “তুই বাবা কাল এসে রক্ত পরীক্ষার জন্য নিস”
অখিল বলতে চেয়েছিল কাল তো রবিবার কিন্তু আমি ওর আত্মসন্মানে ঘা দিয়ে বললাম তুই তাহলে
কি করলি রবিবার রিপোর্ট না বার করতে পারলে। অখিল বারটা খেয়ে গেল। এখন আমি বাবু হয়ে
বালতি ধরে বসে আছি প্রায় আধ ঘন্টা ধরে আমার স্ত্রী আর রেখা নানান খাবার আমার মুখে দেবার
চেস্টা করে যাচ্ছে, ফ্যানা ভাত, জল মুড়ি, বিস্কূট, হরলিক্স, মৌরি জলে ভেজানো, ডালের
জল, পেঁপের ঝোল ফলাফল এক, যাবার সাথে সাথেই ওক করে বেরিয়ে আসছে আর বেরচ্ছেও, যেন জল
কামান। প্রতিবার আমার স্ত্রী অভয় দিয়ে যাচ্ছেন
“ এই তো বমিটা হল এবার দেখবে ভাল লাগবে” কিন্তু ভাল আমার লাগছে না দু দুটো ডালকুলাক্স
সাপোসিটর কালকে ফেল করেছে, আজ জোফার ফেল করল মেরা কেয়া হোগা রে কালিয়া।
১৬ই অগাষ্ট, বিকেল ৫টা, হাসপাতাল, এমার্জেন্সি ওয়ার্ড
“না না আপনি ভাল করে ট্রিটমেন্ট করুন পেশেন্ট আমরা বাড়ি নিয়ে যাবনা”
খুড়তুতো ভাই প্রায় ধমক দিল আর,এম,ও কে, বেচারি নতুন ডাক্তার মনে হয় এখনো বিষিয়ে জাননি।
তিনি শুধু বলতে চেয়েছিলেন এই অবস্থায় বাড়িতে রেখেও ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব। তাতেই ভাই
আর স্ত্রী দুজনেই ক্ষেপে গেল স্ত্রীর বান্ধবী এসেছেন সবাই খুব চিন্তিত। ঘরের বাইরে
ওঁরা কথা বলছেন আমি শুনতে পাচ্ছি… স্ত্রী তাঁর বান্ধবী কে বলছেন “ইশ আমি খালি বলে গেছি
তুমি একটুতেই কাত হয়ে যাও ভাব তো কত স্ট্রেন্থ বলে খুব কেতরে যায়নি” বান্ধবী বলছেন
তোর কোনো ধারনা আছে কি হতে পারত। ভাই বলছে ঠিক আছে কোনো চিন্তা নেই ঠিকঠাক টাইমে ঢুকিয়ে
দেওয়া হল মেডিকেশন এ থাকবে ঠিক হয়ে যাবে। এমন ভাবে বলল মনে হল নিজেকেই নিজে প্রোবোধ
দিচ্ছে।ডাক্তার এলেন এমন ভাবে বললেন “কেমন আছেন” মনে হল আমরা বহুদিনের বন্ধু অনেকদিন
পর মাছের বাজারে দেখা হয়ে গ্যাছে। খালি অখিল পুরো চুপ…… ‘পাঁচ মিনিট চুপ করে থাকত’
এটা ছিল অখিলের সাথে আমার একটা খেলা যেটায় অখিল কোনো দিন জেতে নি। সেই অখিল পুরো চুপ,
মুখ টুক সব থম থম করে আমার পায়ের কাছে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সব্বার এই চিন্তিত
অবস্থার মধ্যে এক আমিই কিন্তু ভাল বোধ করছিলাম কারন আমার হিসাব মিলে গ্যাছে। ডেঙ্গুই
বটে……আমার তাই এখন বেশ ভালই লাগছে হু হু বাওয়া, এখন? সবাই খুব কপচেছো এবার দেখ ডেঙ্গু
বাধিয়ে বসেছি এবার বলো কি বলবে। আসলে কি জানেন তো আপনার যদি রোগ টা একটা বেশ জুতসই
মার্কা না হয় তবে প্রস্টিজ থাকেনা এই যেমন ধরুন আমাশা বেশীর ভাগ বাঙ্গালীই এতে ভোগে
তাই এর কোনো ভ্যালু নেই Dysentry শব্দ টায় একটু চমক আছে বটে কিন্তু লোকে হেব্বি সেয়ানা
হয়ে গেছে। ওতেও কাজ হবার নয় আপনার যদি সর্দি হয় তো কেউ তো পাত্তা দেবেই না উলটে হাজার
খানা পরামর্শ দিয়ে কাপ্তেনি করবে। তাই রোগের খেত্রেও এমন একটা কিছু বাধান দরকার যাতে
লোকে বেশ একটা মান্যি গন্যি করে বেশ একটা খবর টবর নেয়। নিজেকেও তখন একটা কেউ কেটা লাগে
টাগে আর কি । আমার বউ তো এক্সাইটমেন্ট এ ফেসবুকে স্টেটাস ই দিয়ে দিলেন। যাক বাবা আমাদের
ফ্যামিলি তেও একজন ডেঙ্গু রুগী আছে। তার পরে যখন জানা গেল এটা পরিস্কার জলে ডিম পারা
মশার কাজ এবং নাম টা তেও বেশ একটা মিশরীও প্রভাব আছে তখন তো মনে হল আমি আমার ফ্যামিলির
স্টেটাস ই বাড়িয়ে দিয়েছি। কথায় বলে মারি তো গন্ডার লুটি তো ভান্ডার।
কেবিন এ চালান হবার পরে ড্রিপ চালু হতে সময় নিল আধ ঘন্টা তার মধ্যে আমার বউ ফোন রিসিভ করলেন খান ৪০। ওদিকে আর এক বিপত্তি হসপিটাল এর দেওয়া পেশেন্ট এর পোশাকের জামা টা আমার ১০ বছরের ছেলের গায়ে ছোটো হবে আর পাজামা টা নির্ঘাৎ গ্রেট খলির মাপের কারো। আমি বললাম জামা না পেলে দুটো সেফটিপিন আনুন পাজামায় ঢুকে দুই ঘাড়ে দুটো আটকে দিলে দিব্যি কাজ করবে। মনিপুরি নার্স দিদি তাতে মিষ্টি করে হেসে বললেন “ম্যায় দেখতা”।
কেবিন এ চালান হবার পরে ড্রিপ চালু হতে সময় নিল আধ ঘন্টা তার মধ্যে আমার বউ ফোন রিসিভ করলেন খান ৪০। ওদিকে আর এক বিপত্তি হসপিটাল এর দেওয়া পেশেন্ট এর পোশাকের জামা টা আমার ১০ বছরের ছেলের গায়ে ছোটো হবে আর পাজামা টা নির্ঘাৎ গ্রেট খলির মাপের কারো। আমি বললাম জামা না পেলে দুটো সেফটিপিন আনুন পাজামায় ঢুকে দুই ঘাড়ে দুটো আটকে দিলে দিব্যি কাজ করবে। মনিপুরি নার্স দিদি তাতে মিষ্টি করে হেসে বললেন “ম্যায় দেখতা”।
হাসপাতালে শুয়ে আপনি ৪ ধরেনের মানুষ এর দেখা পেতে পারেন ১.যাকে এক্সপেক্ট
করেন নি, ২.যাকে এক্সপেক্ট করেছেন কিন্তু চান নি তিনি আসু্ন, ৩.যাকে এক্সপেক্ট করেছেন
আর তিনিই সব্বার আগে এসেছেন ৪.যাকে এক্সপেক্ট করেছেন আর তিনি আসেন নি। আমার ক্ষেত্রে
কোনো ব্যাতিক্রম হল না ক্রম পর্যায় টাও আমার হিসাব মতই মিলে গেল। যারা আসতে পারলেন
না তারা ফোন এ খবর নিলেন এবং প্লেটিলেট কে সামলে দিয়ে আমিও ৫ দিনের মাথায় বাড়ি ফিরে
এলাম। ডাক্তার বাবু আমায় কথা দিয়েছিলেন পায়খানা টা করিয়ে ছাড়বেন সেটাও বাউন্ডুলে ছেলের
মত হা রে রে রে রে রে করে বের হয়ে গেল। আমি বাথরুমে বসে যে জেসচার টা করলাম তার সাথে
গোল দেবার পরে মেসি আর রজার মিল্লা ছাড়া আর কারো মিল নেই নিশ্চিত।
পেঁপে পাতার রসে নাকি ডেঙ্গুর
ভাল কাজ হয় কিন্তু সেটা এত্ত ম্যাজিকাল জানা ছিল না পিসতুত ভাই টোটকা টা হোয়াটস
অ্যাপ করেছিল। আর পাতা জোগালো পাড়াতুতো বোন দেবিকা। ব্যাস, প্লেটিলেট ২ দিনেই ২ লাখ ছাড়াল। অখিল রিপোর্ট দিয়ে প্রেসার চেক
করে বললো ১২০/৮০ একদম ঠিক। আমি বললাম একটু দুর্বল লাগছে রে ভাই। অখিল ওমনি আ আ আ আ
করে পুরনো ফর্মে ফিরে গিয়ে বললো “তোমার শরিল কি আমার থেকে বেশী খারাপ? তুমি কিছু জান?
কোন খবর রাখ? আমার গা হাত পা ঝিম ঝিম করে,মাথা ভনভন করে, আর্ধেক দিন কাজের লোক আসেনা
সেই সক্কাল থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রক্ত টেনে গু মুত কালেকশান করে ৮টায় দোকান খুলি তারপরে,
ভাগনে ১২ টার আগে টিফিন আনতে পারেনা………” আমি এমন মুখ করে কথা গুলো শুনলাম যেন জীবনে
প্রথমবার শুনছি।
No comments:
Post a Comment