Wednesday, February 20, 2019

সুন্দরম





ভূত ও তিলোত্তমা

অভিনয়ের ক্লাস কেমন চলছে তোমার?

রুহিতনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
দিদিমণি আজ কী কী জাদু দেখাবে?
তার ঝাঁপি থেকে একে একে বেরোচ্ছে,

প্রথম পুরুষের গলা-কাটা ধড়
প্রথম সহবাসের রজঃ, স্রাব ও রক্ত
প্রথম বিচ্ছেদের জটিল মৌনতা।
কী অনায়াসে জাগলিং করছেন তিনি

তোমার অস্থি ভাসিয়ে তিনি পরেছেন,
লালপাড় সাদা শাড়ি। কালো চাঁদ টিপ।
বামদিক চেরা সিঁথি যেন সন্ধের শূন্য মেঘ

তোমাদের গতজন্মের মেয়ের ডাকনাম ধরে ডাকো

ডাকো তোমার বিদেহী আত্মাকে
প্রেতযোনি থেকে জগৎ-ব্যাপী হাঁ-এ

তিনি হাপিত্যেশ বসে আছেন, কখন ঝাঁপি থেকে
বেরুবে বিন্দুমাত্র প্রেমসুধা অথবা চাপচাপ ঘৃণা...





জন্মদিন এল, মৃত্যুদিন গেল চলে
________________________


তোমার গোড়ালি বেয়ে শরীরে গজিয়েছে
মস, শ্যাওলা সবুজ।
কত জন্ম তুমি বসে আছ, এভাবে নিবিড়!
বাংলা ভুলে গেছ প্রায়...
গলায় বেড় দিয়ে, পাকে পাকে বাইছে লতা,
অণুজীবের ঘর-সংসার

কয়েক যুগ পেরিয়ে গেল, কথা বলা হলনা...
তুমি সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ---
তোমার হাত নেই। পা নেই। শিশ্ন নেই। যোনি নেই।
তুমি ঠোঁট নও, আঙুল নও;
মাথার জায়গায় কবন্ধ হাঁটুমন নেই, বুকে ছেঁদা
তুমি জীবন্ত-জীবাশ্ম অথবা প্রেত।

বন্ধুরা যে যার মতো ঘর-সংসারী হলো, ওয়াটর বটল
গলায় বাচ্চারা চলল কিড-জি।
পুরোনো ক্যালেন্ডারের জায়গা নিল নতুন, জন্মদিন
এল; মৃত্যুদিন গেল চলে...
তাঁর কেবল সাড়া নেই; পাত্তা নেই। হাওয়ায় মিলিয়ে
গেছেন তিনি, মার্চের মাঝামাঝি!



তারার আঁধার
___________


শিখেছে সার্কাসি কসরত
বাঘিনীর হাঁ-এ মাথা পাতার দুঃসাহস!
চোখ বুজে টিপে দিলে ট্রিগার,
জানে, গুলি লাগবে অব্যর্থ, তৃতীয় নয়নে।

ওই যে বসে আছে মহাপ্রস্থানের কুকুরটি
নাছোড়; ভিতরে তাহার---
ঘোরে পায়ে পায়ে। গায়ের গন্ধ চেনে।
দূর করে দেওয়ার পরেও ফিরে ফিরে আসে দোরে...

কী আঁক কষে? কাটে, মোছে নয় কুঠুরি;
সরে সরে যায় গ্রহ সংস্থান, নক্ষত্র অবস্থান।
ছিলে রাজযোটক, একত্রে উচ্চারিত বীজনাম...
হয়েছে ইদানীং উচ্ছিষ্ট মুসুরির ডাল!



হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি
___________________


আপনাকে আর দেখি না রাস্তায়!
কোথায় গেছেন আপনি?
কার সেন্টার টেবিলে রয়েছেন, শো-পিস হয়ে?
আপনিও কি শেষতক প্রবজ্যা ছাড়লেন,
সুখী গৃহকোণের লোভে?
অথচ, আপনিই তো আমায় শিখিয়েছেন,
কিভাবে ভালোবেসে দেওয়া খুদকুঁড়োও হয়ে ওঠে পরমান্ন।

এখন, ওই পাখি এসে বসবে কার কাঁধে?
আপনি কি তবে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় হয়ে গেলেন?
আপনার নিমীলিত চোখই বুঝিয়েছিল,
বিষয়শূন্যতা কী! কেবল তারাদের ফুটে ওঠা;
সূর্য ছাই উঠুক বা না উঠুক।
রোজের এই, 'বান্দা হাজির হ্যায় আকা' চাকরির
অবসরে, আপনার ঐ ধ্যানমুদ্রাই তো ছিল---
দিনগত পাপক্ষয়ের মধ্যে চিলতে মোক্ষ।
তাও আপনি কেড়েকুড়ে নিয়ে চম্পট দিলেন!

আমার তো আর মেরী ম্যাগদালেন নেই,
সুজাতার দেওয়া পায়েস ও বিশাখার চিবর নেই।
নেই নটী বিনোদিনীর আকুল ডাক।
আমার অষ্টসখী নেই। ষোলো হাজার গোপিনী নেই।
নেইগুলি নিয়ে নুইয়ে পড়ে আছে আমাদের হতশ্রী,
বত্রিশপাটি দাঁত ক্যালানো জীবন-পায়জামা।
তথাপি, আপনি ছিলেন আমার; রাস্তার ধারে।
বৃষ্টি মাথায়, রোদের তাতে, ধুলোতে, বালিতে ও কাদায়।

কুলুঙ্গি থেকে লাফ মেরে বেরিয়ে আসুন, শোকেস থেকে...
বাণী ও রচনা ছেড়ে। কথামৃতের বকলমা ছেড়ে
রাস্তায় এসে দাঁড়ান। আরো একবার, এই মর-পৃথিবীর
রক্ত ও ক্লেদের দিকে তাকিয়ে, আমাদের না
বলতে পারা স্বর হয়ে উঠুন। জিজ্ঞেস করুন
আরামায়িকে : "ইলাহি, ইলাহি, লামা সাবাক্তানি?"



No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"একটা কথা আমি বলি। আমরা অনেকগুলো জিনিস খবরের কাগজে দেখি। সারফেসে দেখি, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। আমাদের আর কিন্তু প্...

পাঠকের পছন্দ