Wednesday, February 20, 2019

গল্প এলা বোস




মিসক্যারেজ

কেমন অদ্ভুত নিষ্ফলা একটা নির্জনতা এই হাসপাতাল চত্বরে। ঋভুকে এরা অনুমতি দিয়েছে তার সামনের একটা ছোট্ট বেডে রাতটা কাটানোর। তাতে যে খুব কিছু লাভ হল এমনটা নয়, কারণ সামনের মানুষটার সাথে পাথরের তেমন কোনও পার্থক্য খুঁজে পায়না সে। দুজন ভিন্ন গ্রহের মানুষের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এর আওয়াজ ছাড়া কোনও শব্দ নেই কোথাও। ভিতরে একটা তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে নিস্পলক রাত কাটানো আজ ততটাও সহজ নয়। সকালে টয়লেটে গিয়ে নিজের চোখকে কেমন যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তার। এত জমাট রক্ত !!! বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠল। তবেকি সে যা গল্প শুনে এসেছে এতকাল ধরে, সেটাই হল তার সাথে ? খুব ধীরে ধীরে এসে খাটে বসে তার আতঙ্কের কথা জানায় ঋভুকে। নাহ , কোনও হেলদোল নেই। অফিসের কি সমস্ত কাজ আর বাড়ির কূটকচালি নিয়ে তিতিবিরক্ত ঋভু সজোরে দরজা টেনে দিয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে বেরিয়ে গেল। বৃষ্টি খুব ধীরে ধীরে শুয়ে পড়ল। প্রথম ফোনটা করল তার দিদিকে l দিদি খানিকটা উত্তেজিত ও কড়া সুরে নির্দেশ দিল " একদম নড়াচড়া করবি না। সবার আগে ডাক্তার কি বলে দেখ"। দ্বিতীয় ফোনটা করল ডাক্তারবাবুকে অনেক কষ্টে সাহস সঞ্চয় করে। তিনি কি সুন্দর ঠাণ্ডা গলায় বললেন, " যা হবার হয়ে গেছে কিন্তু ক্লিনিং জরুরি আপনি ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে আসার চেষ্টা করুন, আমি সব ব্যবস্থা করে দেব। একটা রাত থাকতে হবে।" ঋভুর ফোন রিসিভ করার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই, কাজেই শ্বশুরমশাই ভরসা, দিদি তো চলেই আসবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে। এসব ভাবনার মধ্যেই শ্বশুর, শাশুড়ি চলে এলেন। তার সামনে এমন আলোচনা হতে থাকল যেন সে আসবাব বই কিছু নয়। শ্বশুর - " একবার তাহলে ডাক্তারবাবুকে খবর দি, দেখে যান বরং। "শাশুড়ি চোখ গোল গোল করে বলে উঠলেন " কেন ? কেন? বাড়িতে ডাক্তার ডাকার কি হয়েছে? বাড়ি আসা মানেই তো একগুচ্ছ টাকা নষ্ট। ওসব চিন্তা বাদ দাও তো " সহজ, সুলভ সিদ্ধান্তের শেষে দুজনের প্রস্থান। 

বৃষ্টি এখন একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছটফট করছে। শ্বশুরকে একা পাওয়ার। তলপেটে একটা সুতীক্ষ্ণ  যন্ত্রণা নিয়ে পায়ে পায়ে বাইরে এসে দেখল শাশুড়ি একাই ড্রইং রুম এ বসে খবরের কাগজ পড়ছেন, চোখে চশমা। 
"কিছু বলবে ? "
" বাবা ..."
" বাবা বিশ্রাম করছেন ঘরে, এখন ডাকা যাবে না "
আবার অনেকটা সময় পরে কলঘরে জলের আওয়াজ পেয়ে মনে হল হয়ত শাশুড়ি স্নানঘরে এখন। হ্যাঁ, বাবা একাই বসে আছেন। ধীর পায়ে এসে পাশে বসে বৃষ্টি বলল " সে আর নেই মনে হচ্ছে বাবা..."
" তাতে কি হয়েছে ? তুমি তো রইলে ...তুমি থাকলে আবার আসবে "। 

তলপেটে তীব্র যন্ত্রণা, ....তবু তার এখন মারাত্মক খিদে পাচ্ছে। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ঠায়। সে নিশ্চয়ই অনেকটাই অদৃশ্য ! শাশুড়ি স্নান সেরে এ ঘর ও ঘর ঘুরছেন, ক্রীমের গন্ধ, ভিজে চুল     ..এবার শ্বশুর খুব মৃদুস্বরে বললেন " ওকে একটু খেতে দাও, ওর দিদি এসে গেলে আমরা আবার বের হব তো "

সব মিটে গেল কত দ্রুত। এসব ছুটকো কাজে ঋভুকে আশাই করা যায় না, অফিস ফেরত চলে এসেছে বাবার ডাকে, হয়ত নিশ্চিন্ততার আহ্লাদে। পরেরদিন সকাল। এই বেডটা বেশ উঁচু । এখন তার পক্ষে একা নামা একটু অসুবিধের। ঋভুর হাতটা কি এগিয়ে এল? নাহ, হাসি পেয়ে গেল।  নামতে গিয়ে ঝাঁকুনি লাগল, তলপেটে একটু চাপ পড়ল। শূন্যতার উপভোগ্য কম্পন তো বরাবরই মৌলিক। একা একা হেঁটে জানলার সামনে দাঁড়াতেই চিলতে আকাশে চাপচাপ রক্ত-পাশের মেঘগুলোর রঙ বোঝা যাচ্ছেনা। একটা ছায়া যেন কোথা  দিয়ে ঘরে ঢুকেই ব্যথার উপর ঠোঁট রাখল। 

কিসের ছায়া? থাক,কিছু না জানাই থাক।


2 comments:

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"একটা কথা আমি বলি। আমরা অনেকগুলো জিনিস খবরের কাগজে দেখি। সারফেসে দেখি, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। আমাদের আর কিন্তু প্...

পাঠকের পছন্দ