Wednesday, February 20, 2019

পঙ্কজ চক্রবর্তীর গুচ্ছ কবিতা






সাংসারিক
(ইমন,অরুন্ধতী কে) 

ক্ষত আরোগ্যের মাঝখানে , তোমার সামান্য হাসি,এটুকুই আমার শুশ্রূষা।আমি ব্যর্থ স্বামী।ভাবি সাবধানে তোমার টিফিন গুছিয়ে দিই।জলের বোতল রেখে আসি ব্যাগের ভিতর।একদিন এইসব দায়িত্বের প্রয়োজন হবে।তুমি বাড়ি ফিরবে আবার।হলুদ রান্নাঘর আর অলৌকিক বিড়াল নিয়ে শুরু হবে নতুন সংসার।আমাদের সন্তানহীন দাম্পত্য জীবন ভরে থাকবে রাত্রির ছলনামুখর সংলাপে।ধর্মীয় উন্মাদ আর রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারীর গোপন আঁতাত নিয়ে তর্ক জমে উঠবে নিশ্চয়।
তার আগে তোমার বাড়ি ফিরে আসা আশু প্রয়োজন।গৃহস্থালি এবং নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের আবার বসতে হবে।আপাতত কথা একটাই।তুমি ফিরে না আসা পর্যন্ত গৃহস্থের মন নেই কাজে।সে অবুঝ বালক হয়ে বারান্দার দোলনায় একা একা দুলেই চলেছে।



  স্বীকারোক্তি

গোটা জীবন জুড়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা বিষণ্ণতা আমাকে আরও ক্ষীণ নিরাপত্তা দাও।ভাঙা জাহাজ আমি দেখিনি অথচ স্বপ্নের ভিতর এক গুমঘর,গলির ভাঙাচোরা দোকানের মতো অনিশ্চিত।পিছন থেকে ছুটে আসছে নাছোড় অভিশাপ-যেন ধূসর বাল্যকাল,ধুলোখেলাময়।এখন ক্ষত জরুরি,নিরাময় আরও বিপজ্জনক এক সিঁড়ি।কীভাবে পেরবো এই পথ যখন গাছে গাছে ফুটে আছে আলো ফুল,কীভাবে বলব আমি মনের বিষাদ।
চলো উঠে পড়ি।তোমাকে রেখে আসি হেলানো বটের গায়ে ভাঙাচোরা রোদ্দুরের মায়ায়।তারপর আমার ছুটি।তোমাদের হাসিছলনায়,উৎসবের ঘোর আনন্দের ভিতর আমি চকিতে দেখে ফেলেছি লুকোনো সন্দেহের বিষণ্ণরেখা-এই আমার উপাসনা,কবিতার আশ্চর্য প্রথম চরণ।

 একটি জীবন

নিরাপত্তার যে ধারণা নিয়ে আমি রাস্তা পেরোই তা বিপজ্জনক,সন্দেহপ্রসূত অবিবেচনা।হে মহাজীবন,আমি কি পেরেক ঠুকে পরীক্ষা করে নেব এই পথ ও গোপন আস্তানা?আমি কি ছলনার মদিরতা দিয়ে জীবনকে সুন্দর করে তুলব-আরও বিশদ?মাঝরাস্তায় শুয়ে আছে যে গর্ভবতী কুকুর আমি কি তার কাছ থেকে পাঠ নেব তুচ্ছতা কতখানি মহৎ,ঘেউঘেউ দিয়ে ঢাকা নীরবতাগুলি।
কবিতা ও কলমের কাছে আমার প্রত্যাশা কিছু অধিক।
কালি শেষ হওয়ার আগে আমাকে লিখে যেতে হবে আত্মঘাতী প্রাণীদের মেধাহীন বিবেচনাগুলি।যা জীবনেরই প্ররোচক এবং দ্বিধাহীন দূরত্ব দিয়ে ঢাকা।

বাৎসল্য
 
আমার মেয়ের হাতে রণজিৎ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা দেখে আমি চমকে উঠি।ও কি কোনোদিন টের পাবে ধর্ষণ আর শ্লীলতাহানির ধূসর তফাত।গ্যারেজের মাথায় থমকে আছে যে সন্ধ্যার বিষণ্ণ মেঘ তার সম্ভবনার দিকে ও কি চলে যাবে কুমারী নদীটির মতো।ভয় হয়।ঠাকুরমার ঝুলির ভিতর বসে আছে ধূর্ত শেয়াল- ফাঁস করে দেবে সব গোপন সংবাদ।এই অবসরে সশস্ত্র ডালিমকুমারের গল্প বলে ওকে আশ্বস্ত করি ।
যেন দৃশ্য এক রচিত হল – রূপকথার পোশাক পড়ে সেতু পেরিয়ে চলে যাচ্ছে মা ও মেয়ে – নির্বাসনপ্রিয় বাবার ছায়া পড়েনি কোথাও ।

No comments:

Post a Comment

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

"একটা কথা আমি বলি। আমরা অনেকগুলো জিনিস খবরের কাগজে দেখি। সারফেসে দেখি, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। আমাদের আর কিন্তু প্...

পাঠকের পছন্দ